রেনশি
পাঠ
ও ভাষান্তর : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
‘রেনশি’,
জাপানি সংযুক্ত কবিতা (লিঙ্কড পোয়েম) ‘রেনকু’-র আধুনিক রূপ। ২০১৫ সালে দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ৭০ বছর উপলক্ষে রাজনীতিবিদরা যখন ১৫ই অগাস্ট ঐতিহাসিক ভাষণের
প্রস্তুতি সারছেন; তখন জাপান, চীন এবং কোরিয়ার (দঃ) চারজন কবি ঠিক করলেন অনুবাদ
এবং ইমেলের মাধ্যমে তাঁরা একে-অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ত্রিভাষিক রেনশি কবিতা-সেশন
করবেন। যা থেকে তৈরি হয় ৩৬টি কবিতার এক সিরিজ। কবিতাগুলো ‘সমুদ্র’, ‘শাদা ভাত’ এবং
‘সূর্য’, প্রধানত এই ভাবনাসূত্রে (থীম) গ্রথিত। এ যেমন একদিকে মানবতার উদযাপন,
তেমনি রাষ্ট্র, জাতি, এমনকি ভাষার সীমা অতিক্রম করে যাওয়া, এবং বিশ্ব জুড়ে
ক্রম-পচনশীল অবক্ষয় ও বিশৃঙ্খলার সামনে কবিতার এক প্রতিরোধও।
কবি
পরিচিতিঃ
ইয়াসুহিরো
ইওৎসুমোতো (জাপান) – জন্ম, ১৯৫৯, ওসাকায়। প্রকাশিত
কাব্যগ্রন্থ ১০টি। ১টি উপন্যাস এবং একাধিক অনুবাদ। ইংরেজিতে অনূদিত ওঁর কবিতার
সংকলন ‘ফ্যামিলি রুম’ প্রকাশিত হয়েছে ২০১০-এ। থাকেন মিউনিখে।
মিঙ
ডি (চীন) – কবি, অনুবাদক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ
৬টি। কবিতা এবং অনুবাদের একাধিক বই সম্পাদনা ও অনুবাদ করেছেন। বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে ভাষাতত্ত্বে স্নাতক। বর্তমানে ক্যালিফোর্ণিয়া এবং বেজিং-এ থাকেন।
কিম
হাইসুন (দঃ কোরিয়া) – কোরিয়ার অন্যতম কবি। জন্ম
১৯৫৫। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ১০টি।
শুন্তারো
তানিকাওয়া (জাপান) – জন্ম ১৯৩১-এ, টোকিওতে। জাপানের
সর্বাধিক পঠিত কবিদের মধ্যে অন্যতম। জাপানের প্রথাগত কাব্যধারা ‘রেনকু’কে আধুনিক
কবিতায় ফিরিয়ে আনারও অন্যতম একজন তিনি। ‘কাই’ কবিতাগোষ্ঠীর অন্যান্যদের সঙ্গে
মিলিত হয়ে ওঁর ‘রেনশি’ কাব্যসংকলন ‘কাই রেনশি’ (১৯৭৯) জাপানের বাইরেও আদরণীয়। সাম্প্রতিককালে
স্যুইশ কবি জার্গ হল্টার-এর সঙ্গে ২০১২ সালে এবং কোরিয়ার কবি শিন কিয়ং-নিম-এর
সঙ্গে ২০১৫ সালে যৌথভাবে এই পরিসরে কাজ করেছেন তানিকাওয়া।
সমুদ্র
৩
নিকষ
কালো রাতে, সীগালগুলোও যখন ঘুমে কাদা
বাচ্চারা
সব বেরিয়ে আসছে, স্যুটকেস টানতে টানতে
সবাই
ঘুমন্ত, শুধু বাচ্চারা বাদে
পশ্চিমের
জেটিঘাট থেকে চুপিচুপি একটা ফেরি ছাড়ল
সারা
বছরের নামে, সেই একই বিদায়ী শিশুর দল, এক ফেরি, একই মেঘ, এক আকাশ
[কিম
হাইসুন]
৫
যতবার
আমি কবিতা লিখতে বসি বেয়ে বেয়ে উঠে যাই চাঁদে, আর
অদ্ভুত
এক শান্তির টঙ ঘরে বসে নীচে তাকিয়ে দেখি আমার ঘর
দেখার
চেষ্টা করি সেই ঠাণ্ডা নীলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রক্তের লাল
এই
সমুদ্র আমাদেরকে পৃথক করেছে
এই
সমুদ্র জুড়ে দিয়েছে আমাদের
[ইয়াসুহিরো
ইওৎসুমোতো]
৭
ইলেক্ট্রিকের
তারে বসা পাখি, ডানা ভেজা
যে
দরজা খুলবে না তাতে আঁচড় রেখে চেরীর মুকুল ঝরে পড়ছে নখের মতো
পাহাড়ের
অনেক ওপরে ভিজে জবজবে সূর্যটা আরও ভারী হচ্ছে
সমুদ্রের
লোনা জলে তৈরি কেউ দাঁড়িয়ে থাকছে জানলার বাইরে
যাকে
ধরা যাবে না, সকালের কুয়াশার মতো পাতলা, যে।
[কিম
হাইসুন]
শাদা
ভাত
১৩
ধানক্ষেতে
সমুদ্র উপচে পড়তেই, উড়ে এল এক ডলফিন
তার
বিরাট মুখে ধরা ধান
ডলফিন
উড়ছে — আর নীচু আকাশে ব্যাপ্ত হচ্ছে শাদা
ডলফিন
যত উড়ছে — একটা মেয়ে ছুটছে, সূর্য ওঠার আগেই
সে
তার বাচ্চাদের জন্য ধানগুলো লুকিয়ে ফেলতে চায়
[মিঙ
ডি]
১৪
রান্না
করা শাদা ভাতের একটা দানা
চৈনিক
‘বাবা’ (父) শব্দটির
থুতনির দাড়ি ধরে ঝুলছে
যেন
হারিয়ে যাওয়া এক ছোট্ট ঈশ্বর
[ইয়াসুহিরো
ইওৎসুমোতো]
২২
মা
বলেছে ইতিহাস বইকে অন্ধের মতো বিশ্বাস না করতে
কিন্তু
আমার প্রপিতামহের ডায়রিটার কী হবে?
যার
পরের কটা পাতা সেদ্ধ ভাতের আঠা দিয়ে জোড়া।
[ইয়াসুহিরো
ইওৎসুমোতো]
সূর্য
৩৩
সাইন
ল্যাঙ্গুয়েজের ক্লাসে ঘন্টার বদলে বেজে উঠল একটা আলো
ক্লাসের
শেষে আর দুপুরের খাবার সময়েও বাজল
সকার
রেফারি ছুটে এসে নম্রভাবে দেখালেন ফাউল
ঘড়ির
দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকতে থাকতে তিনি পতাকা তুলে ধরলেন খেলার শেষে
জয়ী
আর পরাজিত দল, রেফারি, আর দর্শক সবাই নিজেদের হাত দিয়ে প্রজাপতি বানালো আর সূর্যের
আলোর দিকে ছেড়ে দিল তাদের
[ইয়াসুহিরো
ইওৎসুমোতো]
দারুণ বলব না কি বলব বুঝতে পারছি না, শুধু বলব, এই বিভাগ আমাদের কাছে পিলারের মত... @ অভিষেক
ReplyDeleteমূল্যবান সব কবিতা পঠিত করে নিতে পারছি । বিশ্বসাহিত্য ভান্ডারে হালকা করে প্রবেশ হয়ে যাচ্ছে । ধন্যবাদ বিভাগীয় সম্পাদককে
ReplyDelete